Categories
Uncategorized

প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘরের মালামাল ফেরত নিল প্রশাসন,২৯ পরিবারের বিলাপ

পটুয়াখালী প্রতিনিধি॥
ভূমি অফিসের লোকজনের হাতে-পায়ে ধরে কান্নাকাটি করেছি, তবুও তারা ঘরের মালামাল ফেরত নিয়ে গেছেন। মুজিববর্ষে প্রধানমন্ত্রী গরিবদের ঘর উপহার দিছেন। এসব ঘরে অনেকেই পরিবার নিয়ে বাস করছেন, তাহলে আমার কী অপরাধ? ঘর তৈরির মালামাল দিয়ে তারা আবার ফেরত নিচ্ছেন কেন? এ অন্যায়ের বিচার কে করবেন? ঘর তোলার জন্য ৩৫ হাজার টাকা সুদে এনে ডোবা ভরাট করে ভিটা বানাইছি। এখন তো টাকাও গেল, ঘরও গেল! কান্নাজড়িত কণ্ঠে এভাবেই বিলাপ করছিলেন পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার ছোটবাইশদিয়া ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের তাসলিমা বেগম।

তাসলিমার মতো আরও ২৯ পরিবার প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘরের মালামাল পেয়েও হারিয়েছেন। মুজিব শতবর্ষে তৃতীয় পর্যায়ের প্রথম ধাপে ‘ক’ শ্রেণিভুক্ত ২৯৭ জনের নামের মধ্য ২৯ ব্যক্তির মালামাল ফেরত নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। নতুন ঘর তোলার জন্য ইট, বালু খোয়া দেওয়া হলেও সম্প্রতি তা ফেরত নেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে পরিবার গুলোর মাঝে আহাজারি চলছে। ভুক্তভোগীরা বলছেন, প্রধানমন্ত্রীর ঘরের তালিকায় নাম উঠাতে ধারদেনা করেছি। এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে ঘরের ভিটা বানাইছি। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলেও ঘর তৈরির করে দেওয়ার পরিবর্তে মালামাল ফেরত নিয়ে যাচ্ছেন ইউএনওর লোকজন।

তৃতীয় পর্যায়ের প্রথম ধাপে ‘ক’ শ্রেণিভুক্ত ৫০ নাম্বার ক্রমিকে মো. তোফাজ্জেল প্যাদা, ৯৪ ক্রমিকে মোসা. মিনারা বেগম, ২২১ ক্রমিকে মোসা. তাসলিমা বেগম, ২৫৭ ক্রমিকে শাহ আলম, ১৮৪ ক্রমিকে মো. রেজাউল এবং ২৪৪ নাম্বার ক্রমিকে মোসা. কমেলা বেগমসহ ২৯ জনের মালামাল ফেরত নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে উপজেলা প্রশাসনের বিরুদ্ধে। ভুক্তভোগীরা আরও বলেন, ইতোপূর্বে রাঙ্গাবালী উপজেলায় প্রধানমন্ত্রীর ঘর দেওয়া হয়েছে। ওইসব ঘরের সিংহভাগ জমিতে নীতিমালা মানা হয়নি। তাহলে শেষ পর্যায়ে নীতিমালার অজুহাতে আমাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা কেন টালবাহানা করছেন?

শাহ আলম প্যাদা বলেন, ডিসি, ইউএনও এবং মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ আছে বলেই রানাসহ কয়েক যুবক ঘরের মালামাল জোর করে নিয়ে গেছেন। এরপর থেকে আমি অসুস্থ। অন্যদের ঘর উঠছে। কী কারণে আমাদের ঘরের মালামাল নিয়ে গেছে, জানি না। এ বিষয়ে উপজেলা ভূমি অফিসের তহশিলদার মনিরুল ইসলাম বলেন, আমি শুধু ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার হুকুম পালন করেছি।

রাঙ্গাবালী উপজেলা পরিষদের নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাশফাকুর রহমান বলেন, সম্ভবত জমি নির্ধারণ সংক্রান্ত বিষয়ে ডিসির কাছে অভিযোগ ছিল, তাই জেলা প্রশাসন এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
তিনি বলেন,এবার এককভাবে নয়, গুচ্ছ আকারে ঘর দেওয়া হবে। আগের গুলোতে অসঙ্গতি ছিল। এককভাবে ঘর দিলে জমি নষ্ট হয়, খাস এবং ব্যক্তি জমি নিয়ে দ্বন্দ্ব হয়। এবার উঁচু স্থানে আশ্রয়ণ আকারে হবে। তাছাড়া ‘খ’ শ্রেণিতে ঘর দিতে গেলে আগে ‘ক’ শ্রেণি সম্পূর্ণ শূন্য ঘোষণা করতে হবে। আরও ৪৮ জন বাকি আছে, তাদের দিয়ে শূন্য ঘোষণা করা হবে।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামাল হোসেন বলেন, ঘর নির্মাণে জমি পছন্দে আগে ত্রুটি ছিল। আগে বাড়িতে বাড়িতে এককভাবে হয়েছে। এবার গুচ্ছ আকারে হবে। সরেজমিনে যাচাই করে এর অসঙ্গতি পাওয়া গেছে। তাছাড়া ঘর বরাদ্দে যে নীতিমালা রয়েছে, তার আওতায় এগুলো পড়েনি, তাই মালামাল ফেরত নেওয়া হচ্ছে।