পটুয়াখালী প্রতিনিধি
ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী বলেছেন-প্রচলিত ভূমি জরিপে এক থেকে দেড় যুগ সময় লাগে সেখানে সল্প সময়ে বাংলাদেশ ডিজিটাল জরিপ সম্ভব হবে। এই জরিপ শুরুর সাথে সাথে খসড়া ম্যাপ তৈরি করে ওয়েবসাইটে দেয়া হবে,যাতে জমির মালিক পৃথিবীর যে কোনো প্রান্ত থেকে তার জমির ম্যাপ দেখে জমির পরিমানে অসঙ্গতি পরিলক্ষিত হলে তাৎক্ষনিক আপত্তি দাখিল করতে পারেন। ডিজিটাল জরিপে যাবতীয় তথ্য ডিজিটাল ও নির্ভুল হওয়ায়,জরিপে স্বচ্ছতা আসবে, মামলা মোকদ্দমা কমে আসবে, সাথে জনগণের ভোগান্তিও কমে আসবে। বক্তব্য প্রদানের পূর্বে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবার এবং ১৫ আগষ্টে সকল শহীদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানান মন্ত্রী।
বুধবার(০৩ আগষ্ট)পটুয়াখালীর জেলা প্রশাসকের কার্যালয় সংলগ্ন মাঠে বাংলাদেশ ডিজিটাল জরিপ (বাংলাদেশ ডিজিটাল সার্ভে-বিডিএস)-এর পাইলটিং-এর উদ্বোধন শেষে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় ভূমিমন্ত্রী এসব কথা বলেন। বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো সর্বাধুনিক ফোর্থ জেনারেশন সার্ভে ড্রোনের মাধ্যমে ডিজিটাল জরিপের পাইলটিং পটুয়াখালী শুরু করা হয়েছে। পটুয়াখালী ও বরগুনা জেলায় এসএ জরিপের পর আরএস জরিপ সম্পন্ন না হওয়ায় উক্ত দুটি জেলার ১৪ টি উপজেলা বিডিএস এর জন্য বাছাই করা হয়েছে। পটুয়াখালীর সদর উপজেলার ইটবাড়িয়া ইউনিয়ন থেকে শুরু হবে এই জরিপ।
অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নারী সাংসদ কাজী কানিজ সুলতানা হেলেন, বরিশাল বিভাগীয় সহকারী কমিশনার মোঃ ওয়াহেদুর রহমান, বিডিএস কার্যক্রমের প্রকল্প পরিচালক মো. আব্দুল মান্নান, ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোঃ মোয়াজ্জেম হোসেন এবং পটুয়াখালীর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামাল হোসেন, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শহিদুল্লাহ্, জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা কাজী আলমগীর ও সাধারন সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা ভিপি আবদুল মান্না, প্রেসক্লাবের সভাপতি কাজী সামসুর রহমান ইকবাল, সাধারণ সম্পাদক মুজাহিদ প্রিন্স। এছাড়াও সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দ গণমাধ্যম সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ভূমি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো মোস্তাফিজুর রহমান।
মন্ত্রী আরও বলেন-আমাদের অন্য একটি প্রকল্পের মাধ্যমে স্যাটেলাইট ইমেজ কিনে সেটা মৌজা ম্যাপের সাথে সমন্বয় করে ডিজিটাল ল্যান্ড জোনিং ম্যাপ তৈরি করা হচ্ছে। এর ফলে কৃষিজমি, জলাভূমি, পাহাড় ও বনভূমি রক্ষাসহ জমির পরিকল্পিত ব্যবহার করাও সম্ভব হবে। এনআইডি ইন্টিগ্রেশন থাকায় এখানে জমির মালিকানা,শ্রেণী ও ধরন ইত্যাদি বিষয়ে ডিজিটাল তথ্যভাণ্ডার গড়ে উঠবে। যা দিয়ে জেলা-উপজেলা, বিভাগ ও জাতীয় তথ্যভাণ্ডার গড়ে উঠবে। ফলে ভূমি ব্যবস্থাপনায় যুগান্তকারী পরিবর্তন আসবে। বিডিএস একবার ঠিকভাবে করা সম্ভব হলে পুনরায় মাঠ জরিপ করার প্রয়োজন হবে না কারণ জমি হস্তান্তর হলে এসিল্যান্ড প্রয়োজনীয় ডাটা ইনপুট দিয়ে নিজেই ম্যাপ পার্টিশন করে নিতে পারবেন। ম্যাপে সুনির্দিষ্ট দাগে ক্লিক করে ঐ দাগের জমির মালিকানা, জমির পরিমাণ, চৌহদ্দি ও শ্রেণীসহ অন্যান্য তথ্য পাওয়া যাবে।
মন্ত্রী আরও বলেন-বিডিএস পাইলটিং-এর ম্যাপ তৈরি করার জন্য এবার পরীক্ষা মূলক ভাবে এবার প্রথমবারের মত ডিজিটাল ভূমি জরিপ কাজে সক্ষম বেসরকারি প্রতিষ্ঠাকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে জানিয়ে ভূমিমন্ত্রী বলেন-তবে জরিপের খতিয়ান প্রস্তুত এবং মালিকানা নির্ণয়ের কাজ সরকারি ভাবেই করা হবে। এই পাইলটিং এর অভিজ্ঞতা নিয়ে পরবর্তীতে দেশের বাকী জেলায় একযোগে শুরু করার পরিকল্পনা করা বিডিএস-এর শুভ উদ্বোধন প্রধানমন্ত্রী করবেন বলে আশা প্রকাশ করেন ভূমিমন্ত্রী।
অপরদিকে অনুষ্ঠান শুরুর পূর্বে ডিসি দরবার হলে ভূমি সচিব মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান পিএএ বলেন-বিডিএস ম্যাপে জমির পরিমাণ,জমির আইলের দৈর্ঘ্য, প্রস্থ, আকার ইত্যাদি সম্পর্কে জানা যাবে। এই জরিপে তৈরি ম্যাপটিতে সেন্টিমিটার পর্যায় পর্যন্ত এই ভূমি পরিমাপের নির্ভুলতা থাকবে। ডিজিটাল জরিপ বিষয়ে ১৯৫৫ সনের প্রজাস্বত্ব বিধিমালা ৩০ বিধিতে আপত্তি ও ৩১ বিধিতে অনলাইনে আপীল আবেদন ও শুনানি নিষ্পত্তি করার ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এছাড়াও সরকারি বিভিন্ন সংস্থার জমি, খাস জমি, রাস্তাঘাট, জলাধার, নদী খাল ইত্যাদি চিহ্নিত করা হবে, ফলে জমি দলিল ও নামজারি করার সময় জালিয়াতি করে সরকারি জমি আত্মসাৎ বন্ধ করা সম্ভব হবে। এছাড়া অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে দাগভিত্তিক প্রয়োজনীয় জমির পরিমাণ জেনে ক্ষতিপূরণ নির্ধারণ ও প্রদান ও জালিয়াতি প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে এই জরিপ শেষ হলে।
প্রসঙ্গত,সারাদেশে ডিজিটাল জরিপকরণের সক্ষমতা অর্জনের জন্য সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ভূমি মন্ত্রণালয় ১২১২.৫৫ কোটি টাকা ব্যয়ে বাংলাদেশ ডিজিটাল সার্ভের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। ‘ডিজিটাল পদ্ধতিতে ভূমি জরিপ করার জন্য ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরের ডিজিটাল জরিপ পরিচালনার সক্ষমতা বৃদ্ধিকরণ প্রকল্প’ নামে ৫ বছর মেয়াদি প্রকল্পের মাধ্যমে এই জরিপ কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। অপেক্ষাকৃত স্বল্প সময়ে, নির্ভুলভাবে ডিজিটাল পদ্ধতিতে ভূমি জরিপ করার জন্য বাংলাদেশ ভূমি জরিপ তথা বাংলাদেশ ডিজিটাল সার্ভেতে স্যাটেলাইট, ড্রোন তথা ইউএভি এবং গ্রাউন্ড কন্ট্রোল স্টেশনের সমন্বয়ে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে।